রাণীনগর রেলওয়ে ষ্টেশনের মৃত্যু ফাঁদ ফুটওভার ব্রীজটি ভাঙ্গা শুরু

বিকাশ চন্দ্র প্রাং, স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ:

নওগাঁর রাণীনগর রেলওয়ে ষ্টেশনের সেই মৃত্যু ফাঁদ নামক ফুটওভার ব্রীজটি সংস্কার কিম্বা পুন:নিমার্ণ না হলেও পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঘর মুখি মানুষের ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত যাত্রীদের দূর্ঘটনা এড়াতে রেল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্রীজটি ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু করেছে। প্রতিটি ঈদ কিম্বা তিথি-পরবে রাজধানী ঢাকা বা অন্য শহর থেকে ছুটিতে ট্রেনের ছাদে ভ্রমনকারী যাত্রীদের এই ফুটওভার ব্রীজের সাথে ধাক্কা লেগে হতাহতের ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটত। বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে রেল কর্তৃপক্ষ সচেতনতা মূলক একটি সাইনবোর্ড দিয়ে দায় সাড়ার চেষ্টা করলেও পুন:রায় দূর্ঘটনা এড়াতে ঈদুল আযহা’র আগেই জনস্বার্থে ব্রীজটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ফুটওভার ব্রীজটি নতুন করে নিমার্ণের সম্ভবনা না থাকায় ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে’র নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা সদরে অবস্থিত রাণীনগর রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন ফুটওভার ব্রীজটি যাত্রী ও সর্ব সাধারণ ঝুকিমুক্ত রেল লাইন পারাপারের সুবিধার্থে নিমার্ণ করা হয়। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত যাত্রী ব্রীজটিতে ধাক্কা লেগে মাঝে মধ্যেই হতাহতের ঘটনায় মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়েছে। ট্রেন গুলো নির্ধারিত গতিতে নিবিঘেœ চলাচলের জন্য সময়ের প্রয়োজনে রেললাইন মাঝে মধ্যে সংস্কার করায় রেলের পাটাতনের উচ্চতা কিছুটা বৃদ্ধি হলেও ফুটওভার ব্রীজটি আগের মতই থাকার কারণে বাধ্য হয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকারী যাত্রীরা অসাবধানতা বসত প্রায়ই ব্রীজের রেলিং এর সাথে ধাক্কা লেগে গুরুত্বর আহত সহ নিহতের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। প্রতি বছরই মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে ব্রীজের রেলিং এর সাথে ধাক্কা লেগে নিহতদের তালিকা দিনদিন ভারী হচ্ছে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় দুই উৎসব সহ বিভিন্ন পূজা- পার্বনে রেলের যাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ায় এক শ্রেণীর যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই ট্রেনের ছাদে চরে নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করে। দিনাজপুর, সৈয়দপুর, চিলাহাটী, পার্বতীপুর, নিলফামারী, সান্তাহার সহ উত্তর জনপদের বিভিন্ন রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে ঈশ্বরদী, যশোর, খুলনা, যমুনা সেতু পাড় হয়ে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত দিন রাতে আন্ত:নগর ও মেইল ট্রেন সহ প্রায় ১১ টি ট্রেন নিয়মিত রাণীনগর রেলওয়ে ষ্টেশন হয়ে চলাচল করে। রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চলে ষ্টেশনের ক্যাটাগরি মোতাবেক অধিকাংশ স্থানে ফুটওভার ব্রীজ আছে। সেই সব ব্রীজের সাথে ধাক্কা লেগে প্রাণহানীর ঘটনা কম-বেশি থাকলেও রাণীনগর রেল ষ্টেশনে স্থাপিত ফুটওভার ব্রীজের রেলিং এর সাথে ধাক্কা খেয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা যাত্রীদের প্রতি মাসেই প্রায় আহত-নিহতর ঘটনা লেগেই আছে। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঘর মুখি মানুষের ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত যাত্রীদের দূর্ঘটনা এড়াতে রেল কর্তৃপক্ষ ব্রীজটি ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু করেছে। বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশনে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, যদিও ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। ছাদে ভ্রমণে যাত্রীদের আমরা বারবার নিষেধ করলেও এক শ্রেণীর যাত্রীরা নিষেধ না মানার কারণে রাণীনগরের ওভার ব্রীজের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রাণহানীর মত ঘটনা বেরেই চলেছে। বিট্রিশ আমলে নির্মিত রেলগুলো সময়ের প্রয়োজনে নতুন করে নির্মাণ কিংবা সংস্কার করায় পাটাতনের উচ্চতা কিছুটা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে ওভার ব্রীজের রেলিং এর সাথে অসাবধানতা বসত ছাদে ভ্রমণ যাত্রীদের দূর্ঘটনার শিকার হতে হয়। স্বাভাবিক ভাবে প্রতিটি ওভার ব্রীজ প্রায় ১৭ ফিট থেকে সাড়ে ১৭ ফিট উঁচু হয়। কিন্তু রাণীনগরে রেল লাইন থেকে ওভার ব্রীজের উচ্চতা মাপ মোতাবেক ১৫ ফিট ৩ ইঞ্চি এবং ট্রেনের উচ্চতা ১৩ ফিট ৬ ইঞ্চি। তাই ট্রেনের ছাদে যাত্রীরা যখন বাধ্য হয়ে ভ্রমণ করে তখন ওভার ব্রীজের রেলিং এর সাথে ধাক্কা লেগে প্রায়ই মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। বেশ কিছু দিন আগে রাণীনগর রেল ষ্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মরত ষ্টেশন মাষ্টার না থাকায় নজরদারী আরো কমে যাওয়ায় দূর্ঘটনার মাত্রা বেড়েই চলছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ২০ তারিখে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুর গামী দ্রুতযান আন্ত:নগর ট্রেনের ছাদে ভ্রমণরত যাত্রীদের মধ্যে ৭ জন যাত্রী ওভার ব্রীজের সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই ৪ জন যাত্রী মারা যায় এবং আরো ৩ জন গুরুত্বর আহত হয়। আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো দুই জন যাত্রী রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটনার পরেদিন মারা যায়। রাণীনগরে ৬ জন যাত্রী মারা যাওয়ার পর রেল বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে মৃত্যু ফাঁদ এই উড়াল সেতু সংস্কারের আশ্বাস দিলেও প্রায় ৬ মাস পর রেল কর্তৃপক্ষ ওভার ব্রীজ সংস্কার কিম্বা পুন:নিমার্ণ না করে দূর্ঘটনা এড়াতে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু করেছে। নিরাপদ সড়ক চাই রাণীনগর উপজেলা শাখা’র সভাপতি সাইদুজ্জামান সাগর জানান, একই স্থানে বারবার দূঘটনায় প্রানহানির মতো ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ ব্রীজটি বারবার সংস্কারের আশ্বাস দিলেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। তবে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে যাত্রী-সাধারণের র্দূঘটনা এড়াতে অবশেষে ব্রীজটি ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। যা আমাদের কাম্য ছিল না, ব্রীজটি ভেঙ্গে ফেলার কারণে ট্রেন যাত্রী ও রাণীনগর সদরের পশ্চিম ও পূর্ব অঞ্চলের মানুষের চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্রীজ প্রকৌশলী মো: মনিরুজ্জামান জানান, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ঘর মুখি যাত্রীরা ফুটওভার ব্রীজের সাথে ধাক্কা লেগে হতাহতের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই লক্ষ্যে আপাতত: ব্রীজের উপরের অংশটুকু ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। ঈদের পর দরপত্রের মাধ্যমে ফুটওভার ব্রীজটি সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment